ডার্ক মোড
Image
  • Tuesday, 21 October 2025
মহেঞ্জোদাড়ো

মহেঞ্জোদাড়ো

মহেঞ্জোদারো  ছিল প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম নগর-বসতিগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি অধুনা পাকিস্তান রাষ্ট্রের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় অবস্থিত। ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ নির্মিত এই শহরটি ছিল বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম এবং প্রাচীন মিশরমেসোপটেমিয়া ও ক্রিটের সভ্যতার সমসাময়িক। এই শহরের পুরাতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটিকে "একটি প্রাচীন সিন্ধু মহানগর" নামেও অভিহিত করা হয়।

মহেঞ্জোদারো খ্রিস্টপূর্ব ২৬ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এটা প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম শহরগুলোর একটি, যেখানে আরেকটি প্রাগৈতিহাসিক শহর হরপ্পা গড়ে ওঠেছিল। সিন্ধু সভ্যতা বর্তমান পাকিস্তান ও উত্তর ভারতে ছিল, যার বিস্তৃতি ছিল ইরান সীমান্ত, দক্ষিণে ভারতের গুজরাট, উত্তরে বাক্ট্রিয়া পর্যন্ত, যার প্রধান প্রধান শহর ছিল হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথালকালিবাঙ্গানধলাবিরা এবং রাখিগাড়ি। এদের মধ্যে মহেঞ্জোদারো ঐ সময়ে পুরকৌশল ও নগর পরিকল্পনায় শ্রেষ্ঠ ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৯ শতাব্দীতে সিন্ধু সভ্যতার প্রায় আকস্মিক পতন ঘটে এবং মহেঞ্জোদাড়ো পরিত্যক্ত হয়।

সম্ভবত মহেঞ্জোদারো ছিল সিন্ধু সভ্যতার একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। উন্নতির মধ্যগগনে মহেঞ্জোদারো ছিল দক্ষিণ এশিয়ার উন্নততম নগরী। এই শহরের নগর পরিকল্পনা ও উন্নত প্রকৌশল ব্যবস্থাই প্রমাণ করে যে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের নিকট এই শহর ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের গণভবনগুলি উচ্চমানের সামাজিক সংগঠনের পরিচায়ক। স্যার মর্টিমার হুইলারের মতে, মহেঞ্জোদারোর তথাকথিত মহাশস্যাগারটিতে গ্রামাঞ্চল থেকে গরুর গাড়িতে আনীত শস্য জমা রাখা হত। শস্য শুকিয়ে রাখারও ব্যবস্থা ছিল এখানে। যদিও জোনাথান মার্ক কেনোয়ার এটিকে শস্যাগার বলতে রাজি হননি। তার মতে এখানে শস্য জমা রাখার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি এটিকে "মহাকক্ষ" বা "গ্রেট হল" নামে অভিহিত করেন। সেখানকার মানুষ ফ্ল্যাশযুক্ত টয়লেট ব্যবহার করত। আর তাদের পানি সরবরাহ ও আবর্জনা নিষ্কাশনের এমন চমৎকার ব্যবস্থা ছিল, যা আধুনিক পাকিস্তানের অনেক শহরকেও টেক্কা দিতে পারে।

পাকিস্তানের সর্বোচ্চতম তাপমাত্রা ৫৩.৫° সেন্টিগ্রেড (১২৮.৩° ফারেনহাইট) ২০১০ সালের ২৬ মে তারিখে এখানেই নথিভুক্ত হয়। এই তাপমাত্রা শুধু পাকিস্তানেরই নয় সমগ্র এশিয়া মহাদেশের নির্ভরযোগ্যভাবে পরিমাপকৃত সর্বোচ্চতম তাপমাত্রা এবং বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ এই শহর পরিত্যক্ত হয়। ১৯২২ সালে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের আধিকারিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহেঞ্জোদারো পুনরাবিষ্কার করেন। ১৯৩০-এর দশকে স্যার জন মার্শাল, কে. এন. দীক্ষিত, আর্নেস্ট ম্যাককি ও অন্যান্যদের অধীনে এখানে ব্যাপক খননকার্য চালানো হয়। ১৯৪৫ সালে আহমদ হাসান দানি ও মর্টিমার হুইলারও এখানে খননকার্য চালান। মহেঞ্জোদাড়োয় শেষ বড়ো খননকার্য চলে ১৯৬৪-৬৫ সালে ড. জি. এফ. ডেলসের অধীনে। এরপর উন্মুক্ত স্থাপনাগুলি আবহাওয়াজনিত ক্ষয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেখে এখানে খননকার্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এখানে কেবলমাত্র রক্ষণমূলক খননকার্য, উপরিতল সমীক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পেরই অনুমোদন দেওয়া হত। ১৯৮০-এর দশকে ড. মাইকেল জ্যানসেন ও ড. মরিজিও তোসির নেতৃত্বে একট যৌথ জার্মান-ইতালীয় সমীক্ষা দল আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশন, উপরিতল সমীক্ষা, সারফেস স্ক্র্যাপিং ও প্রোবিং-এর উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাচীন সভ্যতার বেশ কিছু সূত্র আবিষ্কার করেন

১৯৯৬ সালে যখন পাকিস্তান সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সাহায্য বন্ধ করে দেয়, তখন মহেঞ্জোদারোর সংরক্ষণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তহবিলের ব্যবস্থা করে ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে এপ্রিলে পুনরায় সংরক্ষনের কাজ শুরু করে। বন্যা তহবিল থেকে অর্থের সংস্থান করে ২০ বছর মেয়াদে $১০ মিলিয়ন দেওয়া হয় অঞ্চল এবং স্থায়ী কাঠামো রক্ষার জন্য। ২০১১ সালে, সাইটের সংরক্ষণের দায়িত্ব সিন্ধু সরকারকে দেয়া হয়।

বর্তমানে, ভূগর্ভস্থ লবণাক্ততা এবং ভ্রান্ত পুনর্নির্মাণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক দেয়াল ইতোমধ্যে ভেঙ্গে গেছে এবং অন্যান্য দেয়াল ক্ষয়ে গেছে। ২০১২ সালে পাকিস্তানের প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই বলে সতর্ক করেন যে, উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা ছাড়া এলাকাটি ২০৩০ সালের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে।

মহেঞ্জোদাড়ো
মহেঞ্জোদাড়ো

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

সংযুক্ত থাকুন

নিউজলেটার

নতুন আপডেট পেতে আমাদের মেইলিং তালিকায় সাবস্ক্রাইব করুন!